
ভারতকে হারিয়ে প্রতিশোধ, আবারও এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব বাংলাদেশের
খেলা ডেস্ক
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৫৩
অনূর্ধ্ব–১৯ এশিয়া কাপে ভারতের কাছেই বারবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের। ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল ভারতের যুবারা। ২০২১ সালের আসরেও ভারতের কাছে হেরেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে।
সেই হারের হিসেব গত আসরেই ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছিল শেষ চারের লড়াই থেকে বিদায় করে। আর এবার টুর্নামেন্টটির ফাইনালে ভারতকে প্রথম হারের স্বাদ দিলো বাংলাদেশ।
গত বছরই প্রথম এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে সেবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এবার ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব বাংলাদেশের। টানা দ্বিতীয়বারের মতো যুব ক্রিকেটে এশিয়ার সেরা হলো বাংলাদেশের ইয়াং টাইগার্সরা।
আজ (রোববার) দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৪৯.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করতে পেরেছিল ১৯৮ রান। এই রানটাই ভারতের জন্য পাহাড়সম হয়ে যায় বাংলাদেশের পেসারদের দাপটে। ভারত ৩৫.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করতে পেরেছে ১৩৯ রানে। যুব এশিয়া কাপে নয়বার ফাইনাল খেলে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে নিতে পারল না ভারত।
১৯৯ রানের ছোটো এক লক্ষ্য। কিন্তু সেটাকেই জয়ের জন্য যথেষ্ট বানিয়ে ছাড়লেন বাংলাদেশের বোলাররা। একের পর এক উইকেট নিয়েছেন যুবা পেসাররা। থিতু হতে দেননি কাউকেই। শেষ দিকে অনেকটা সময় ধরেই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান। তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের পথটা সহজ করে দেন টাইগারদের অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম।
অবশ্য জয়ের পথে বাংলাদেশের পথটা সহজ করে ফেলেছিলেন মূলত তরুণতুর্কি পেসার ইকবাল হোসাইন ইমন। এক স্পেলে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন তিনিই। একই ওভারে প্রায় একইরকমের ডেলিভারিতে ফেরান কার্তিকেয়া এবং নিখিলকে। দুজনেই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। এক ওভার পরেই ফের তার আঘাত। এই দফায় আউট হলেন হারভানশ পানগালিয়া। এই দফায়ও উইকেটের পেছনে গিয়েছে ক্যাচ। বাংলাদেশও তাতে ম্যাচে ফিরেছে দারুণভাবে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে কিছুটা বিপাকেই পড়েছিল বাংলাদেশ। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ ক্রিকেট উপহার দিলেও ফাইনালে এসে ক্রিজে থিতু হতেই ভুলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ভারতের বিপক্ষে যখন বলার মতো স্কোর নেই কারো ব্যাটে, তখন লোয়ার মিডল অর্ডারের ফরিদ হাসান দায়িত্ব নিলেন দলকে বলার মতো সংগ্রহ এনে দিতে। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন মারুফ মৃধাকে।
ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দুইশ’র আগেই থামে বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরু থেকেই রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে বাংলাদেশের যুবাদের। ৭ম ওভারে কালাম সিদ্দিকী আউটের আগে ১৬ বলে করেছিলেন মোটে ১ রান। সেটাই হয়ত ইঙ্গিত দেয়, ব্যাটিং পিচে ঠিক কতটা সংগ্রাম করেছে বাংলাদেশ। তবে তিনে নামা আজিজুল হাকিম তামিম কিছুটা হতাশই করেছেন। পুরো আসরে অধিনায়ক তামিম মুগ্ধতা ছড়ালেও ফাইনালে করতে পেরেছেন মোটে ১৬ রান। আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরারও ২০ রানের বেশি করতে পারেননি।
৬৬ রানে অধিনায়ক আজিজুল তামিম বিদায়ের পরেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে নিয়েছেন দিনের সেরা দুই ব্যাটার রিজান এবং শিহাব জেমস। ৬৭ বলে ৩ চার আর ১ ছক্কায় শিহাব করেছেন ৪০ রান। দলীয় ১২৮ রানে বিদায় নেন আয়ুশ মহাত্রের বলে। দেবাশীষ এসেই ফিরেছেন ৩ বলে ১ রান করে। ১৫৫ রানে ফিরে যান রিজান নিজেও। মিস করেছেন ফিফটি।
সব ব্যাটিং বিপর্যয়েই নাকি একটা করে রানআউট থাকে। ক্রিকেটের সেই অলিখিত নিয়ম মেনে ১৬৫ রানের মাথায় রান আউটের শিকার হন সামিউন বশির। দায়িত্ব নিয়ে পারেননি ফাহাদও। ফরিদ হাসান যখন একাকী দাঁড়িয়ে, তখন ১৯ বলে ১১ রান করে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন মারুফ মৃধা। নবম উইকেটে তারা যোগ করলেন ৩০ রান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেমেছে ১৯৮ রানে।
কিন্তু জয়ের জন্য শেষের ওই রানটুকুই হয়ে উঠেছে যথেষ্ট। শুরু থেকেই ভারতকে চাপের মাঝে রাখা বাংলাদেশ দুবাইয়ে প্রবাসী সমর্থকদের মুখে হাসি এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশ পেল এশিয়ানদের যুব ক্রিকেটে নিজেদের টানা দ্বিতীয় শিরোপা।
এফআই