
সংখ্যার গল্পে সেরাদের কাতারে রবিচন্দ্রন অশ্বিন
খেলা ডেস্ক
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১২
জন্মিলে মরিতে হইবে- ছোট বেলায় আদর্শলিপিতে পড়া এই অমোঘ বাণী যেমন ধ্রুব সত্য, তেমনি ‘প্রবেশের পরেই রয়েছে প্রস্থান’ এ ধারনাটিও নিত্যকার কাহিনী। ক্রীড়া জগতে অ্যাথলেটদের প্রস্থানটা আবার ভিন্ন রকম। কারো বাজে ফর্ম, কারো বয়সের ভার, আবার কেউ কেউ ইনজুরির ধকল সামলাতে না পেরে ক্রীড়া জগত থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ভারতের ক্রিকেটে ১৪ বছর কাটিয়ে দেওয়া অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের হুট করে বিদায় বলার কারণটা হয়তো বয়স। তবে বাজে ফর্ম বললেও খুব একটা ভুল হবে না।
২০১০ সালের জুন মাসে ওয়ানডে ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক ঘটে অশ্বিনের। একই মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়ে যান এ স্পিনার। তবে জাতীয় দলের সাদা পোশাকে অশ্বিনকে জায়গা করে নিতে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছরের বেশি সময়। যদিও ম্যান ইন ব্লুদের হয়ে এ সংস্করণে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এছাড়া টেস্ট ফরম্যাটে তার রেকর্ডের সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। এমনকি ভারতের টেস্ট দলের সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন।
টেস্টে নিয়মিত জায়গা পাওয়া অশ্বিন গত কয়েক বছরে রঙিন পোশাকে তার রাজত্ব হারিয়েছেন। সবশেষ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছেন এ বোলিং অলরাউন্ডার। তারপর থেকে শুধু সাদা পোশাকেই খেলছেন তিনি। তবে ঘরের মাটিতেই নিয়মিত মুখ ছিলেন এককালে অলরাউন্ডার তালিকার শীর্ষে রাজত্ব করা এ ক্রিকেটার। বিদেশের মাটিতে খেলা হলে ভারতের ডাগ আউটে দেখা মিলতো অশ্বিনের। এমন টানাপোড়নের মাঝে টেস্ট ক্রিকেটকে আচমকা বিদায় বলে বসলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
ভারতের হয়ে তিন সংস্করণে খেললেও টেস্ট ফরম্যাটে অশ্বিন সর্বকালের সেরাদের একজন। ব্যাটে বলে সমান তালে অবদান রাখা এ ক্রিকেটার ম্যান ইন ব্লুদের হয়ে গড়েছেন নানান রেকর্ড। সংখ্যার তালে এ অর্জনের পরিমাণ বেশ বড়সড়। বিদায় বলার আগে টেস্ট ক্যারিয়ারে যেসব রেকর্ড গড়েছেন অশ্বিন, সেসব সংখ্যায় সংখ্যায় দেখে নেওয়া যাক।
৫৩৭
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুড বায় বলা অশ্বিনের টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ৫৩৭টি। তাতে সাদা পোশাকে বিশ্বের ৭ম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসেবে বিদায় নিয়েছেন তিনি। এ তালিকায় সবার উপরে রয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। টেস্টে লঙ্কান এ তারকা বোলারের উইকেট সংখ্যা ৮০০টি। তবে ভারতীয় হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় অশ্বিন দ্বিতীয়। টেস্টে ৬১৯ উইকেট দখল করে ভারতের হয়ে শীর্ষে রয়েছেন অনিল কুম্বলে।
৭৬৫
ভারতের জার্সিতে তিন সংস্করণে ৩৭৯ ইনিংসে বল করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাতে অর্জনের ঝুলিতে ৭৬৫ উইকেট পুরেছেন এ বোলার। তবে ভারতের হয়ে এ তালিকাতেও দ্বিতীয় চেন্নাইয়ের এ ক্রিকেটার। যথারীতি এ তালিকার উপরে রয়েছেন ভারতের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার অনিল কুম্বলে। যদিও ম্যাচের বিচারে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৩৫০, ৪০০, ৪৫০ এবং ৫০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জনের রেকর্ড রয়েছে অশ্বিনের দখলে।
৩৭
টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ফাইফার অর্জনে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে আছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বিদায় বলার আগে লাল বলে ৩৭ বার পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনি। অশ্বিনের সাথে এ তালিকায় সমানসংখ্যক ফাইফার নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন অজি স্পিনার শেন ওয়ার্ন। তবে ১৩৩ টেস্টে সর্বোচ্চ ৬৭ ফাইফার নিয়ে সবার উপরে রয়েছেন মুরালিধরন।
৫০.৭
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ৮৪ জন বোলার অন্তত ২০০ উইকেট শিকার করেছেন। স্ট্রাইক রেট বিবেচনায় এদের মধ্যে সেরা দশে আছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। যিনি শীর্ষ দশজনের মধ্যে থাকা একমাত্র স্পিনার। সাদা পোশাকে বল হাতে এ অলরাউন্ডারের স্ট্রাইক রেট ৫০.৭০। অর্থাৎ প্রতিটি উইকেট তুলতে তাকে গড়ে ৫০টি বল করতে হয়েছে।
২৬৮
লাল বলের ক্রিকেটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কের নাম রবিচন্দ্রন অশ্বিন। টেস্টে তাঁর নামে থাকা ৫৩৭টি উইকেটের মধ্যে বাঁহাতি ব্যাটারদের সংখ্যা ২৬৮টি। যা টেস্ট ইতিহাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা। বাঁহাতি বাঘা ব্যাটারদের মধ্যে বেন স্টোকসকে আউট করেছেন ১৩ বার। এছাড়া ডেভিড ওয়ার্নারকে ১১ বার, এলিস্টার কুককে ৯ বার আউট করেছেন তিনি।
৬৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১১ সালের নভেম্বরে টেস্টে অভিষেক হয় অশ্বিনের। অভিষেকের পর বিদায়ের আগ পর্যন্ত ঘরের মাটিতে টানা ৬৫টি টেস্ট খেলেছেন। অর্থাৎ দেশের মাটিতে কোন টেস্টে বাদ পড়েননি এ খেলোয়াড়। ঘরের মাটিতে টানা ম্যাচ খেলার তালিকায় অশ্বিন অবশ্য বিশ্ব ক্রিকেটে দ্বিতীয়। নিজেদের ভেন্যুতে একটানা ৮৩টি টেস্ট খেলে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন অ্যালিস্টার কুক।
৩৮৩
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫৩৭টি উইকেটের মধ্যে ৩৮৩টি উইকেট এসেছে ঘরের মাটিতে। যা ক্রিকেট বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট সংখ্যা। দেশের মাটিতে উইকেট তোলার তালিকার শীর্ষে যথাক্রমে অবস্থান করছেন মুত্তিয়া মুরালিধরণ, জেমস অ্যান্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রড।
১৩৩
টেস্টে সাধারণত পুরানো বলে বোলিং করতে আসেন স্পিনাররা। তবে রবি অশ্বিন এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। নতুন বলে (প্রথম ২০ ওভার) মাত্র ২১ গড়ে এ অলরাউন্ডার তুলেছেন প্রতিপক্ষের ১৩৩ উইকেট। যা টেস্ট ইতিহাসে স্পিনারদের হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা। অশ্বিনের পরে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অজি স্পিনার নাথান লায়ন। নতুন বলে তাঁর উইকেট সংখ্যা ৭৩।
২৫
টেস্টে কোনো সিরিজে ২৫ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনায় অশ্বিন সবাইকে ছাড়িয়ে। সাদা পোশাকে ২৫ বার তিনি এ কীর্তি গড়েছেন। এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শেন ওয়ার্ন এবং মুরালিধরন। এ দুই বোলার ৬ বার এ কীর্তি গড়েছেন। ভারতের হয়ে কপিল দেব এ মাইলফলক অর্জন করেছেন ৪ বার।
৩০০০, ৫০০
একজন ক্রিকেটারের ব্যাট হাতে তিন হাজার রান, বল হাতে ৫০০ উইকেটের ঘটনা বিরল। তবে এ বিরল রেকর্ডে নিজের নাম বসিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। টেস্ট ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে ৩৫০৩ রান এবং বল হাতে ৫৩৭ উইকেট তুলেছেন এ অলরাউন্ডার। অশ্বিনের সাথে এ তালিকায় আছেন মাত্র দুজন খেলোয়াড়- শেন ওয়ার্ন এবং স্টুয়ার্ট ব্রড।
১১
টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারি মুরালিধরন এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতার রেকর্ড অক্ষত রেখেছেন। যদিও সম্প্রতি এ লঙ্কান কিংবদন্তির রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ম্যাচ রেশিও বিবেচনায় পুরস্কার জেতার ক্ষেত্রে মুরালি থেকে বেশ এগিয়ে চেন্নাইয়ের সন্তান।
৪
টেস্টে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তিতে সবার উপরে কিংবদন্তি অলরাউন্ডার স্যার ইয়ান বোথাম। ইংল্যান্ডের এ খেলোয়াড় ৫ ম্যাচে এই মাইলফলক অর্জন করেছেন। তবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অর্জনের মুকুটে এ রেকর্ড রয়েছে চারবার। সবশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে চেন্নাইয়ের মাটিতে এ রেকর্ড গড়েন তিনি। তবে একই ভেন্যুতে এ রেকর্ড দুইবার গড়েছেন অশ্বিন। বাংলাদেশের আগে চেন্নাইয়ের মাটিতে ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ মাইলফলক অর্জন করেছেন তিনি।
এমআই