
সাকিব-শিশিরের এক যুগ, গল্পের শুরু যেভাবে
খেলা ডেস্ক
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৫
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ক্রিকেটের তিন সংস্করণে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করেছেন তিনি। আইপিএল, কাউন্টিসহ বিশ্বের নামদামি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আছে এ ক্রিকেটারের। ক্রিকেট খেলুড়ে প্রতিটি দেশেই আছে সাকিবের নাম-ডাক। ক্রিকেটার থেকে তারকা বনে যাওয়া সাকিব ভালোবাসার বন্ধন গড়তেও বড় তারকার পরিচয় দিয়েছেন।
সালটা ২০১১। বাংলাদেশে বসেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। স্বাগতিক দলের অধিনায়কের নাম সাকিব আল হাসান। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বাকি দেশগুলোও সাকিবের নাম চিনতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে বাড়ে সাকিবের ভক্তের সংখ্যা। সাকিব ঘিরে ভক্তদের উৎসব, আনন্দঘন পরিবেশ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের দুদিন আগে ফেসবুকে মার্কিন-মল্লুক থেকে একটি রিকুয়েস্ট আসে সাকিবের আছে। সাত-পাঁচ ভেবে সাকিবও বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে বসেন। সেদিনের বন্ধু তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন মানুষটি উম্মে আহমেদ শিশির।
সময় বাড়ার সাথে সাকিবের আলাপচারিতা বাড়ে শিশিরের সাথে। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেওয়া শিশির ১১ বছর বয়সেই পরিবারের সাথে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। তবে ভার্চুয়াল আলাপ হলেও সাকিবের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়ে উঠেনি। সেই উপলক্ষ্যটা চলে আসে বিশ্বকাপের বছরে। লন্ডনে শিক্ষা সফরে আসা শিশিরের সঙ্গে হুট করে দেখা করেন সাকিব। সেখান থেকেই আজ পর্যন্ত পথচলা।
গুঞ্জনে আছে ভিন্নতা। সাকিবের সাথে শিশিরের পরিচয় ফেসবুকে হলেও ঘটনাটা আরও আগের। ফেসবুকে আলাপ হওয়ার পর ২০১০ সালে ইংল্যান্ডে ওরস্টারশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে শিশিরের সঙ্গে সাকিবের প্রথম পরিচয় হয়। ক্রিকেট না বুঝা আর সৌন্দর্যতায় মুগ্ধ হয়ে শিশিরকে প্রেম নিবেদন করে বসেন সাকিব। এরপর দীর্ঘদিনের প্রণয়, অতঃপর বিয়ে।
সাকিবের প্রেম, ভালোবাসা নিয়ে এত রহস্যের কারণ অবশ্য চতুর সাকিবই। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রহস্য জমিয়ে রাখতেই যেন পছন্দ করেন তিনি। প্রেমের বিষয়ে প্রশ্ন করলেই এড়িয়ে যেতেন, কিংবা উত্তর দিতেন মেপে মেপে। তাতে এ জুটির রহস্য থেকে গেছে দীর্ঘকাল। তবে সব রহস্য উড়িয়ে দিয়ে ২০১২ সালে শিশিরের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন সাকিব আল হাসান। বিয়ের তারিখটাও সাকিবের মতো ম্যাজিকাল। ১২.১২.১২। রহসম্যয় সেই ১২ তারিখের আজ ১২ বছর পূর্ণ হলো।
নিজেদের বিয়ের এক যুগ পূর্তিতে আনন্দঘন বার্তা দিয়েছেন শিশির। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে শিশির লিখেছেন, ‘যখন এটা লিখছি ঘড়ির কাটায় ঠিক রাত ১২টা ১২ মিনিট। ১২ বছর আগে ১২/১২/১২ তারিখ আমরা নিজেদের রূপকথার গল্পটা শুরু করেছিলাম। আমাদের প্রথম দেখা থেকে শুরু আমাদের বিয়ে এবং আলহামদুলিল্লাহ, সবচেয়ে সুন্দর একটা পরিবার গঠনের মাধ্যনে। হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আর হৃদয়ের বন্ধনে থেকে সময়গুলো দুজনে পার করেছি। প্রতিশ্রুতি ছিল একসঙ্গে সারাজীবন থাকার, কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে না যাওয়ার। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসার কোনো তুলনাই হয় না আর প্রতিটা দিনের জন্য আমি তোমাকে ভালোবাসি। নিজেদের জন্য ১২তম বার্ষিকীর শুভেচ্ছা। আলহামদুলিল্লাহ।’
২০১৫ সালে সাকিব-শিশির দম্পতির ঘর আলো করে আসে কন্যা সন্তান আলাইনা হাসান। আলাইনার পর জন্ম হয় মেয়ে ইরাম হাসানের। ২০২০ এর এপ্রিলে জন্মগ্রহণ করে ইরাম। এরপর ২০২১ এর মার্চে ছেলে ইজাহ আল হাসানের জন্ম হয়।
সাংসারিক জীবন ছাড়াও সাকিবের জীবনে অনুপ্রেরণার অন্য নাম উম্মে আহমেদ শিশির। খেলার মাঠেও সাকিবের আত্মবিশ্বাসের অন্যতম সঙ্গী তার সহধর্মিনী। মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার সাথে জেতা ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর সাকিব ম্যাচ শেষের সাক্ষাৎকারে তার স্ত্রীকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। ৮৪ রান আর দুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে সেবার বাংলাদেশকে টেস্টে জিতিয়েছিলেন সাকিব।
তারকা ক্রিকেটার সাকিবকে নিয়েও আছে নানান অভিযোগ। মাঠ ও মাঠের বাহিরের সমালোচনায় প্রায়শই জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ যেমন বিয়ের আগে এক মডেলের সাথে তার প্রণয়ের গুঞ্জন, আবার বিয়ের পর পরকীয়ার প্রলাপ। তবে সব ছাপিয়ে ব্যক্তি সাকিবেই শতভাগ বিশ্বাসী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শিশির। স্বামীর খারাপ সময়ে যেমন ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি গুজবের বিপরীতে দিয়েছেন কড়া জবাব। কারণ, মাঠের অলরাউন্ডার সাকিব স্বামী হিসেবে শিশিরের কাছে বড় তারকা।
এমআই