
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শক্তির জায়গায় যেখানে পিছিয়ে বাংলাদেশ
ইকবাল আজাদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৮
বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা কোন সংস্করণে খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? এমন প্রশ্ন হলে সিংহভাগ উত্তরই হবে- ওয়ানডে। ক্রিকেটের এই সংস্করণে ভালো খেলার কারণও আছে। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে (ডিপিএল) দেশি ক্রিকেটাররা যেভাবে গুরুত্ব দেন, বিপিএল ছাড়া অন্য কোনো টুর্নামেন্টকে এত আমলে নেন না। এই ডিপিএল অনুষ্ঠিত হয় ওয়ানডে সংস্করণে। ফলে ৫০ ওভারের ক্রিকেট বাংলাদেশের খেলোয়াড়, ভক্ত সবার কাছে জনপ্রিয়।
ক্রিকেটের বাকি দুই ফরম্যাটে বাংলাদেশ খুব একটা পাত্তা না পেলেও ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে বেশ সমীহ করে চলে বিশ্বের বাকি দলগুলো। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য বা বড় দলকে হারিয়ে দেওয়ার মতো একাধিক ঘটনা রয়েছে। আইসিসি টুর্নামেন্টের মতো বড় আসরেও ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোকে হারিয়েছে টাইগাররা। ফলে বাংলাদেশকে অনেকটা আমলে নিয়ে বাইশ গজে নামে বড় দলগুলো।
জনপ্রিয় এই ফরম্যাটে গেল দুই বছর ধরে যেন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। সবশেষ ৬ ওয়ানডে সিরিজের ৫টিতেই হেরে বসেছে টাইগাররা। এমনকি ঘরের মাটিতে দুর্ভেদ্য বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে গেছে কিউইরা। অপেক্ষাকৃত ছোট দল আফগানিস্তানের সঙ্গে সবশেষ দুই ওয়ানডে সিরিজে হেরেছে নাজমুল শান্তের দল। শক্তির ফরম্যাট ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে ফর্ম আর পারফরম্যান্স বিবেচনায় বাকিদের থেকে বেশ পিছিয়ে পড়েছে, তা অস্বীকার করার জো নেই।
বাঁহাতি স্পিনারের আক্ষেপ
বাংলাদেশকে বাঁহাতি স্পিনার উৎপাদনের কারখানা মনে করতো বিশ্ব ক্রিকেট। এমন মনে করার কারনও আছে। যখন বাংলাদেশের কেউ ছিল না, তখনো ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। ১৫৩টি ওয়ানডে খেলা আবদুর রাজ্জাক তিন সংস্করণে দেশকে প্রায় ১০ বছর সেবা দিয়েছেন। রাজ্জাকের পর সবশেষ সংযোজন ছিলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বোলিং ভেলকি দেখলে প্রতিপক্ষ দলও হয়তো মনে করতো, বাঁহাতে বল করা কত সহজ!
সেই বাংলাদেশই এখন বাঁহাতি স্পিনারের অভাবে ভুগছে। এ তালিকায় সাকিবই যেন ‘সবশেষ’ হয়েই রইলেন। ২০০৬ সালে অভিষেক হওয়ার পর সাকিব বেড়ে ওঠেছেন আবদুর রাজ্জাকের সহচার্যে। রাজ্জাকের বিদায়ের পর টাইগার ক্রিকেট বাঁহাতি স্পিনার কোটায় একক ভরসা ছিলেন সাকিব। এর মাঝে ইলিয়াস, আরাফাত, সাকলাইন, সানজামুল, নাজমুল, তাইজুলসহ বহু বাঁহাতি স্পিনারের আগমন হলেও বোলার সাকিবের কিঞ্চিৎ প্রত্যাশাও পূরণ করতে পারেননি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিব আল হাসান নেই। বাঁহাতি স্পিনারের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন নাসুম আহমেদ। নির্দিষ্ট লেন্থে টানা বল করতে পারা নাসুমও ওয়ানডেতে আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি। বরং উইকেটের সহায়তা ছাড়া নাসুম যেন নখদন্তহীন বোলার। সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে মাত্র এক ম্যাচ সুযোগ পেয়েছিলেন নাসুম। সেখানে ৭ ওভারে ৫৬ রান বিলিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূল পর্ব শুরুর আগে পাকিস্তান শাহীনসের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেখানে ৫.৫ ওভারে ৫৬ রান বিলিয়েছেন নাসুম আহমেদ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উইকেট থেকে বাড়তি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। সেখানে প্রতিপক্ষকে বাঁহাতি স্পিনার দিয়ে ঘায়েল করতে চাইলে বিপদেও পড়তে পারে লাল-সবুজের দল। কারণ, উইকেট থেকে সহায়তা না পেলে নাসুমের অসহায়ত্বের চেহারা একাধিকবার দেখেছে টাইগার ভক্তরা।
সেরা ফাস্ট বোলারদের নিয়েও দুশ্চিন্তা
বাংলাদেশের বর্তমান ফাস্ট বোলিং ইউনিটকে সময়ের সেরা জুটি বলা যায়। বরং না বললেই বোধ করি ভুল হবে। অভিজ্ঞ তাসকিন, মোস্তাফিজের সঙ্গে তরুণ তানজিম, নাহিদ। প্রত্যেকের বোলিংয়ে আলাদা বৈচিত্র্য আছে। এই যেমন, সিমের ওপর দুর্দান্ত বল করেন পেস বোলারদের নেতা তাসকিন। মোস্তাফিজ তো কাটারের জন্য বিখ্যাত, তানজিম সাকিব বাউন্সে ব্যাটারের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। যেখানে নাহিদ ঝড় তুলেন গতিতে।
বোলিংয়ে এত বৈচিত্র্য থাকার পরেও শেষ ওভারগুলোতে বল করার মতো কিংবা ভরসা রাখার মতো কোনো বোলার নেই। ডেথ ওভারের স্পেশালিস্ট বোলার হিসেবে পরিচিত মোস্তাফিজ আর পুরনো ফর্মে নেই। নতুন বলে দুর্দান্ত তাসকিন শেষের ওভারগুলোতে আসলেই খরুচে হয়ে পড়েন। একই কথা বর্তায় তানজিম সাকিবের বেলায়। ডেথ ওভারে তানজিম ফিরলেই প্রতিপক্ষ রান তোলার মিছিল শুরু করে। নাহিদ তো একেবারেই নবীন।
পরিপক্ক-অনভিজ্ঞ বাংলাদেশি ফাস্ট বোলারদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে। কিন্তু মোস্তাফিজদের এসব দুর্বলতা ম্যাচের পার্থক্য গড়ার বিপরীতে দলকে ডুবিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সবমিলিয়ে টাইগারদের শক্তির জায়গা হিসেবে পরিচিত ওয়ানডে সংস্করণ, বাঁহাতি স্পিনার, ফাস্ট বোলারদের দুর্বলতা কিছুটা হলেও পিছিয়ে রেখেছে। এর সাথে অধারাবাহিক ব্যাটিং যোগ করলে শেষ চারের স্বপ্ন দেখতেও ভাবিয়ে তুলবে।
এমআই