Advertisement
Us Bangla Airlines
দলকে বিপদে ফেলতেই যেন ‘অভিজ্ঞ’ মুশফিক!

দলকে বিপদে ফেলতেই যেন ‘অভিজ্ঞ’ মুশফিক!

ইকবাল আজাদ

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৪

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ তকমাটা দীর্ঘদিনের। সেই তকমাটা লেগেছে মুশফিকের গায়েও। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পঞ্চপাণ্ডবদের মাত্র দুইজন দলের সঙ্গে আছেন। মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বয়স প্রায় ৪০ ছুঁইছুঁই করা রিয়াদ ভুগছেন ফিটনেসের অভাবে। ফলে ভারতের বিপক্ষে খেলা হয়নি তাঁর। মুশফিক দলের অন্যতম ফিট খেলোয়াড় হলেও ব্যাট হাতে তাঁর ‘আনফিট’ অবস্থা দৃশ্যমান।

মুশফিকের সাম্প্রতিক ব্যাটিং অবস্থা পর্যালোচনা করা যাক। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে নামার আগে বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলেছেন তিনি। মুশির দল শিরোপা জিতলেও ব্যাট হাতে বিবর্ণ ছিলেন এই ব্যাটার। ১৪ ম্যাচে ২৬ গড়ে মাত্র ১৮৪ রান করেছেন তিনি। যেখানে একক সংখ্যায় আউট হয়েছেন একাধিকবার। এমনকি ফাইনাল ম্যাচে মাত্র ১৬ রান করে দলকে বিপদের মুখে ফেলে এসেছিলেন তিনি।

বিপিএল খেলার আগে এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে রাজশাহীর হয়ে খেলেছিলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। সেখানে রান পেলেও ছিলো না ম্যাচ জেতানোর মতো ইনিংস। একই সময়ে চলা ক্যারিবিয়ান সিরিজে যেতে পারেননি হাতের ইনজুরির কারণে। আফগানদের বিপক্ষে কিপিং করতে গিয়ে হাতে চোট পান মুশফিক। চোট পাওয়া সেই ম্যাচে দলের বিপদের সময় মাত্র ১ রান করে ফিরেছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

মুশফিকের আউট হওয়ার একটি দৃশ্য

আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ১৯১ রানের ইনিংস বাদ দিলে বলার মতো আর কোনো স্কোর নেই তাঁর। ভারতের বিপক্ষে ৪ ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ৬৯ রান। ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তার ব্যাটের অবস্থা ছিল আরও নাজুক। ৪ ইনিংস মিলিয়ে করেছেন মাত্র ৪৬ রান।

সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে প্রায়ই ‘অভিজ্ঞ ক্রিকেটার’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ব্যাট হাতে এমন নাজুক অবস্থা দেখলে বলার উপায় নেই, তিনি দলের ব্যাটিং স্তম্ভ। তবে মিডল অর্ডার এ ব্যাটার যে অভিজ্ঞ, তা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের হয়ে ৫২২ ইনিংস খেলা মুশফিক ব্যাট হাতে করেছেন ১৫ হাজার ৩০০ রান। যা লাল-সবুজের জার্সিতে কোনো ক্রিকেটারের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। দেশের হয়ে এত ইনিংস ব্যাট করা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার বাংলাদেশকে এরচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন ক্রিকেটের বড় মঞ্চে।

২০২০ সালে কোভিডের জন্য ক্রিকেটাঙ্গনেও বড় ধরণের বিরতি পড়েছিল। এরপর স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি নীতি আমলে নিয়ে বিশ্ব প্রতিযোগিতা সাজিয়েছিলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। কিন্তু করোনার পর কোনো বড় প্রতিযোগিতায় হাসেনি মুশফিকের ব্যাট। বরং বড্ড প্রয়োজনের মুহূর্তে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার দলকে আরও বিপদের মুখে ঢেলে এসেছিলেন।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফল মুশফিক ওয়ানডে বিশ্বকাপে ছিলেন ব্যর্থ

পরিসংখ্যানটা জানানো যাক, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক হয়ে অংশ নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সেই টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে মাত্র ১৪৪ রান করেছিলেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। যেখানে গড় ২০.৫৭ এবং স্ট্রাইকরেট ছিল ১১৩। এর একবছর পরই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এশিয়া কাপ। কড়া সমালোচনার মুখে পড়েও মুশিকে এশিয়া কাপের দলে রেখেছিলেন সাকিব। কিন্তু সেখানেও ২ ম্যাচে মাত্র ৫ রান করেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের হয়ে মাত্র একজন ক্রিকেটার গোল্ডেন ডাকের লজ্জা বয়ে বেড়িয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম বলেই আউট হয়েছিলেন সাবেক দলপতি হাবিবুল বাশার সুমন। ভারতের বিপক্ষে শূন্য রান করে এবার সেই তালিকায় যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।

বাজে ফর্ম আর ব্যাটিং ব্যর্থতায় এরপরই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তারপর শুধু ওয়ানডে এবং টেস্ট ম্যাচ খেলছেন তিনি। ২০২৩ সালের ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে ৪ ম্যাচ খেলেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। যেখানে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৩২। ব্যাটিং স্তম্ভের তকমা পাওয়া এই খেলোয়াড় থেকে নিশ্চয়ই আরও প্রত্যাশা রাখে ক্রিকেট ভক্তরা।

২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের মাটিতে। কন্ডিশনের দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সাদৃশ্যতা রয়েছে। আবার একই ধরণের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশ দল। ফলে এই বিশ্বকাপকে ঘিরে টাইগার ভক্তদের আগ্রহ ছিলো বেশ তুঙ্গে। যেখানে মুশফিককে ভাবা হচ্ছিলো ব্যাটিং দলের নেতা। কিন্তু এই ক্রিকেটার ৯ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ২০২ রান। গড় মাত্র ২৫। এমনকি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে যাওয়ার মতো লজ্জার দিনে মুশফিক মাত্র ১ রান করে বোল্ড আউট হয়েছিলেন।

ভারতের মাটিতে সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার পর গতকাল প্রথমবার আইসিসি টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেছিলেন মুশফিকুর রহিম। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে প্রথম বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। মুশফিক এমন সময় আউট হলেন, যখন বাংলাদেশ দল ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। কিন্তু দলের কঠিন পরিস্থিতিতে হাল না ধরে উল্টো বিপদ বাড়িয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের হয়ে মাত্র একজন ক্রিকেটার গোল্ডেন ডাকের লজ্জা বয়ে বেড়িয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম বলেই আউট হয়েছিলেন সাবেক দলপতি হাবিবুল বাশার সুমন। ভারতের বিপক্ষে শূন্য রান করে এবার সেই তালিকায় যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।

পঞ্চপাণ্ডব সদস্য, সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলুড়ে ক্রিকেটার, দলের ব্যাটিং স্তম্ভের তকমা পাওয়া মুশফিক ইদানীং দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে যেভাবে উইকেট বিলিয়ে আসছেন; তাতে মনে হতেই পারে অভিজ্ঞতার গল্প শোনানো মুশি যেন দলকে বিপদে ফেলতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি আইসিসি টুর্নামেন্টে যার প্রমাণ একাধিকবার দিয়েছেন তিনি।

মুশফিক-তাসকিনের সামনে অপেক্ষা করছে যে মাইলফলক

দেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের বর্তমান বয়স প্রায় ৩৯। বয়স আর ফর্ম বিবেচনায় আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তাতে নিজের ক্যারিয়ারের সবশেষ আইসিসি টুর্নামেন্ট হতে পারে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। প্রথম ম্যাচে যেভাবে দলকে পরাজয়ের মুখে ঢেলে দিয়েছেন, বাকি ম্যাচে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ান এবার সেটাই দেখার পালা।

উল্লেখ্য, জাতীয় দলে মুশফিকের ‘অটো চয়েজ’ হিসেবে জায়গা পাওয়ার কারণ রয়েছে। এর পেছনে যতটা না তার অভিজ্ঞতার কারণ, তার চেয়ে বেশি অবদান লিটন-জাকেরের ব্যর্থতা। ব্যাটে হাতে রান সংকটে ভোগায় জাতীয় দল থেকেই বাদ পড়েছেন লিটন দাস। অন্যদিকে, জাকের আলী দলের সঙ্গে থাকলেও তার কিপিংয়ের দক্ষতা বেশ নাজুক। এছাড়া ব্যাট-গ্লাভসে দারুণ পারফর্ম করা কোনো ক্রিকেটার তুলে আনতে পারেনি বিসিবি। সবমিলিয়ে, ব্যাট হাতে বাজে ফর্মে ভুগেও দলে টিকে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম।

এমআই