Advertisement
Us Bangla Airlines
মোহামেডানের স্বার্থেই তবে জাতীয় দলে বিজয়?

মোহামেডানের স্বার্থেই তবে জাতীয় দলে বিজয়?

খেলা ডেস্ক

২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৫৭

অনেকটা সিলেবাসের বাইরের প্রশ্নের মতো। সিরিজের মাঝপথে বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াডে হুট করে জায়গা পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ঘোষণার আগেও কোথাও আলোচনায় ছিলেন না এই ক্রিকেটার। তবুও দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে আচমকা বিজয়কে টেস্ট দলে ডেকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিজয়ের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া বেশ বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। 

জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ লিপুর দল ঘোষণার ধরণ অনেকটা আলাদা। টাইগার স্কোয়াডে কোনো পরিবর্তন আসলে দল ঘোষণার সাথেই যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করেন তিনি। এই যেমন- চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কেন লিটনকে নেওয়া হবে না, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তবে জাকির হাসানকে বাদ দিয়ে এনামুল হককে দলে নেওয়ার কারণ সেদিন ব্যাখ্যা করেননি প্রধান নির্বাচক। পরের দিন দেওয়া ব্যাখ্যাটিও খুব একটা যৌক্তিক বলা যাবে না।

বিজয়কে দলে নেওয়ার ব্যাখ্যায় গাজী আশরাফ বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় (ওপেনারদের) যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যারা ওপেনিংয়ে ছিল তাদের আউটের ধরণ ছিল দৃষ্টিকটু। বিজয় অবশ্যই অনেক ভালো ফর্মে আছে। তাকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না। একটু দেরিতে হলেও সে তার সুযোগটা পেয়েছে।’ 

দল ঘোষণার একদিন পরে প্রধান নির্বাচকের এমন ব্যাখ্যা খুব একটা যৌক্তিক বলা যাবে না। কারণ, বিজয় ওয়ানডে ফরম্যাটে ভালো ফর্মে আছেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। ওয়ানডেতে থেকে কোনো প্রস্তুতি, অনুশীলন ছাড়াই টেস্ট ক্রিকেটে বিজয়কে নামিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক হবে, তার উত্তর হয়তো প্রধান নির্বাচক ভালো জানেন। তবে এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটারদের ব্যর্থ হওয়ার হার বেশি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই যেন ক্রিকেটের সত্যিকারের ফর্ম।

ডিপিএলে এবারের মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এনামুল হক বিজয়।

বিজয়কে দলে টানা নিয়ে গাজী আশরাফ লিপুর এমন মন্তব্যকে অযৌক্তিক মনে করার আরেকটি কারণ আছে। তিন বছর পর এনামুলকে দলে টানতে গিয়ে বাদ পড়েছেন জাকির হাসান। কোনো ম্যাচ না খেলা জাকিরকে বাদ দেওয়ার যথাযথ কারণ তিনি দেখাতে পারেননি। উল্টো বাজে শটে আউট হওয়া ওপেনারদেরও বাদ দেননি তিনি। বরং নিজের ব্যর্থতার চিত্র ধামাচাপা দিতে এবং কারণ ব্যাখ্যা করতে তিনি জাকিরকে ফিল্ডিংয়ে আরও ক্ষিপ্র হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দলে না খেলে একজন ওপেনার শুধু ফিল্ডিংয়ের কারণে বাদ পড়ছেন, এটা বাংলাদেশ তো বটেই ক্রিকেট বিশ্বেও নজিরবিহীন ঘটনা বলা চলে। 

জাকির না খেললেও জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলেছেন সাদমান ইসলাম এবং মাহমুদুল হাসান জয়। উভয় ব্যাটারই দুই ইনিংসে বাজেভাবে আউট হয়েছেন। তাদের বাদ না দিয়ে খোঁড়া যুক্তিতে জাকিরকে বাদ দিয়ে বিজয়কে দলে টেনেছেন। তবে এর পেছনেও থাকতে পারে প্রভাবশালী ক্লাব মোহামেডানের স্বার্থ। অন্যথায় হুট করে বিজয়ের দলে ডাক পাওয়া চমক রেখে দল ঘোষণার মতো। আবার পুরো সিরিজের আগে বিজয়কে দলে নেওয়ার আলাপ করেননি নির্বাচকরা। 

এনামুলকে চোখে চোখে রেখেছেন বলে জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক। এমনকি তার ‘এ’ দলের পারফরম্যান্সের জন্য দলে নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাকিস্তানের ‘এ’ দলের বিপক্ষে সবশেষ সাদা পোশাকের ক্রিকেট খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই দলে টাইগারদের সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ এনামুল হক। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই সিরিজে তার পারফরম্যান্স বলার মতো নয়। কোনো ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। বরং পুরো সিরিজ (৩ ইনিংস) মিলিয়ে করেছিলেন ১৮ রান। তবে কি ১৮ রানই এনামুলের দলে জায়গা পাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যুক্তি? উত্তরটা প্রধান নির্বাচক ছাড়া হয়তো সবাই জানেন।

জাতীয় দলে এনামুলের সুযোগ পাওয়ার পেছনে হাত থাকতে পারে মোহামেডান ক্লাবের। নিজের ক্লাব না হলেও কীভাবে মোহামেডান এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, তা ব্যাখ্যা করা যাক। ডিপিএলে এবারের মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এনামুল হক বিজয়। গাজী ক্রিকেটার্সকে নেতৃত্ব দেওয়া এই ওপেনার ইতোমধ্যে ৬ শতাধিক রান করেছেন, সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৪টি। নিজের দলের হয়ে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ রান করেছেন এনামুল একাই। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই ব্যাটার হতে পারতেন মোহামেডানের মাথাব্যথার কারণ।

গতকাল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে খেলেছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ক্লাব। সুপার লিগ থেকে শিরোপা জয়ের দৌড়ে টিকে থাকতে বিজয়ের দলের বিপক্ষে মোহামেডানের জয় ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। এই জয়কে সহজ করতেই গাজী গ্রুপের সবচেয়ে সেরা ক্রিকাটারকে সরাতে বিসিবিকে চাপ দিতে পারে মোহামেডান। ক্ষমতাশালী ক্লাবের জোরাজুরিতেই হয়তো বিসিবি বিজয়কে জাতীয় দলে স্থানান্তর করেছে। তাতেই কষ্টার্জিত হলেও গাজীকে হারিয়ে অঘোষিত ফাইনালে পা রেখেছে টিম মোহামেডান। দারুণ ফর্মের বিজয় এই ম্যাচে থাকলে এবং আরেকটি সেঞ্চুরিতে জয়ের দেখা পেলে শিরোপার দৌড়ে তারাও এগিয়ে থাকতো।

বিজয়কে জাতীয় দলের জাতীয় দায়িত্বে পাঠানোর নাম করে যেন পথের কাঁটা সরালো মোহামেডান। ডিপিএলে এবারের মৌসুমে মোহামেডান যে এতটা শক্তি প্রদর্শন করছে, তা আর নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার কিছু নেই। বরং হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা কমাতে তাদের জন্য বিসিবির পুরো নিয়ম পরিবর্তন করে ফেলাই বলে দেয়, কতটা প্রভাব খাটাচ্ছে এই দল।

আবার গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে হৃদয়ে খেলা নিশ্চিত করতে শুক্রবার তামিম ইকবাল যা করলেন, তা দেশের ক্রিকেটের উন্নতির অন্তরায় হিসেবে দেখছেন অনেকে। সেই তামিম ইকবাল এবার ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের হয়ে খেলেছেন। ক্লাবের স্বার্থে তামিমদের দাবি, বিসিবির ওপর চাপ প্রয়োগই বলে দেয়- কেন ঘরোয়া ক্রিকেট বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোনো কাজে আসে না? কিংবা জাতীয় দলে বিজয়ের মতো খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া, নেওয়াতে কতটা প্রভাব খাটায় ঢাকার ক্লাব।