Advertisement
Us Bangla Airlines
লিটনের নেতৃত্বে নতুন টি-টোয়েন্টি দল, শক্তি-দুর্বলতা কোথায়?

লিটনের নেতৃত্বে নতুন টি-টোয়েন্টি দল, শক্তি-দুর্বলতা কোথায়?

খেলা ডেস্ক

০৫ মে ২০২৫, ২১:১৭

পাকিস্তান, আরব আমিরাতের বিপক্ষে আগামী এক মাসের মধ্যে ৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আমিরাতের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজ খেলবে লিটন-শান্তরা। দুই সিরিজকে সামনে রেখে গতকাল ১৬ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

গেল ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও রিপন মন্ডল। ইনজুরির কারণে এই দুই সিরিজে খেলা হচ্ছে না তাসকিনের। বাদ পড়া এসব ক্রিকেটারের পরিবর্তে দলে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মোস্তাফিজ, তানভীর এবং শরীফুল।

শান্ত, হৃদয় ইনজুরির কারণে ক্যারিবিয়ান সিরিজে থাকতে পারেননি। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে সেবার দলের সঙ্গে ছিলেন না মোস্তাফিজ। তবে বোলিংয়ের বিশ্লেষণ আর বুদ্ধিমত্তার বিচারে নাসুমের চেয়ে এবার এগিয়ে গেলেন বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। কোনো ম্যাচ না খেলেই বিশেষ কারণ ছাড়া বাদ পড়েছেন রিপন মন্ডল।

স্কোয়াডের অনুমিত চমক ছিল অধিনায়কত্ব। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের নেতৃত্ব থেকে গত ডিসেম্বরে সরে দাঁড়িয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের ব্যাটিংয়ের প্রতি আরও মনোযোগ বাড়াতে এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। শান্তের পরিবর্তে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লিটন দাস। তার ডেপুটি হিসেবে প্রথমবারের মতো নেতৃত্বে আসছেন শেখ মেহেদী।

টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড যেমন হলো

সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিদায়ে দলে এখন সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মোস্তাফিজুর রহমান। নতুন স্কোয়াডে মোস্তাফিজসহ আছেন আরও চার পেসার। হাসান, তানজিম, নাহিদ রানার সঙ্গে ফিরেছেন শরীফুল ইসলাম। স্পিনার হিসেবে আছেন শেখ মেহেদী, তানভীর এবং লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ব্যাটার হিসেবে আছেন ৮ ক্রিকেটার।

টি-টোয়েন্টি দলের এই স্কোয়াড দেখে আপাতত দৃষ্টিতে খারাপ মনে হবে না। তবে মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের ঘাটতি লক্ষ্যণীয়। সেক্ষেত্রে টপঅর্ডার ব্যাটারদের কিছুটা নিচে নামিয়ে মিডল অর্ডারের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে বিবেচনা করা যেত। নুরুল হাসান সোহানও দারুণ ফর্মে ছিলেন।

স্কোয়াডে শক্তির জায়গা কোথায়

বাংলাদেশ দলে বর্তমানে শক্তির জায়গা বলতে শুধু বোলিংকেই ধরা যায়। বাকি বিভাগে বেশ পিছিয়ে লিটনরা। একাদশে তিন পেসার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে কাকে রেখে কাকে সুযোগ দেবে, তা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের বিপাকেই পড়তে হবে। তবে চোট এড়াতে নাহিদকে হয়তো ম্যাচ বেছে বেছে খেলাবে বিসিবি।

আগ্রাসনে তানজিম এবং অভিজ্ঞতার জন্য সেরা একাদশে থাকবেন মোস্তাফিজ। এছাড়া পিচ বিবেচনায় হাসান মাহমুদকেও একাদশে দেখা যেতে পারে। পেস ইউনিটে বর্তমানে সবচেয়ে ভালো সুইং করতে পারেন হাসান। গতির তান্ডব ছড়াতে হাসানের পরিবর্তে দলে জায়গা পেতে পারেন নাহিদ রানা। শরীফুলও নিজের দিনে প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘুরাতে পারেন।

স্পিনার হিসেবে দলে নিয়মিতই থাকবেন শেখ মেহেদী। ডানহাতি এই স্পিনার লেন্থ ডেলিভারিতে প্রতিপক্ষকে বেশ ভুগিয়ে ছাড়েন। পাশাপাশি বলের গতি আর ইয়ার্কার মারার দক্ষতায় ব্যাটারদের ভালো পরীক্ষায় ফেলেন। এছাড়া লেগ স্পিনার রিশাদ বাংলাদেশ স্কোয়াডের নিয়মিত মুখ। 

পিএসএলে লাহোর কালান্দার্সের জার্সিতে ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। পাকিস্তানে খেলার অভিজ্ঞতায় রিশাদকে বাকিদের তুলনায় এগিয়ে রাখবে। তবে দলের প্রয়োজন এবং প্রতিপক্ষ বিবেচনায় একাদশে সুযোগ পেতে পারেন তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের গতির তারতম্য বেশ আশা জাগানিয়া।

কোথায় পিছিয়ে লিটনের দল

ব্যাটিং দুর্বলতা লিটনদের বেশ পিছিয়ে রাখবে। স্কোয়াডে ৮ জন ব্যাটার দলে থাকলেও টপ অর্ডার ব্যাটার ৫ জন। এর মধ্যে লিটন, শান্তের রান খরা বাংলাদেশকে বেশ ভোগাবে। যদিও সেরা একাদশে শান্তের সুযোগ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই। অন্যদিকে তানজিদ, ইমন, সৌম্য দলে থাকলেও তাদের কেউই ব্যাট হাতে ধারাবাহিক নন। 

ওপেনারদের ভিড়ে দলে মিডল অর্ডার ব্যাটার নেই বললেই চলে। জাতীয় দলে মিডল অর্ডারে খেলেন তাওহীদ হৃদয়। বিপিএলে এবার ওপেনিং করেছেন এই ব্যাটার। দলের বাকি দুই ব্যাটার শামীম, জাকের খেলেন লোয়ার মিডল অর্ডারে। তাতে ৫ নাম্বারে ব্যাট করার মতো কোনো ক্রিকেটারকে দলে নেয়নি বিসিবি। এক্ষেত্রে মিরাজ, অঙ্কন, সোহান ভালো বিকল্প হতে পারতো।

স্কোয়াডে অলরাউন্ডার হিসেবে জায়গা পাওয়া রিশাদ, মেহেদীর ব্যাটিংয়ের ওপর তেমন আস্থা রাখার সুযোগ নেই। জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেললেও ব্যাট হাতে ম্যাচ জেতানো কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি শেখ মেহেদী। এছাড়া আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগা রিশাদ ভুল শটে উইকেট বিলিয়ে আসেন। তাছাড়া ফাস্ট বলে তার ব্যাটিং দুর্বলতা নতুন কিছু নয়।

সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রলেপ না দিতে পারলে আগামী সিরিজেও ভুগবে বাংলাদেশ দল। পাশাপাশি স্কোয়াডে মিডল অর্ডার ব্যাটারের প্রয়োজনীয়তা কিছুটা হলেও অনুভব করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। এক্ষেত্রে বিপিএলের পারফর্মারদের ওপর আস্থা রাখতে পারতো বিসিবি। তবে জাতীয় দলের অতীত পারফরম্যান্স দেখেই হয়তো দল নির্বাচন করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

এমআই