সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো বিশ্বের ১০ ক্রিকেটার
খেলা ডেস্ক
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৩
ক্রিকেটাররা মাঠে যেমন সাফল্য, পরিশ্রম আর প্রতিভার আলো ছড়ান। মাঠের বাইরে তাদের জীবনও থাকে খ্যাতি ও বিলাসে ভরা। অনেক সময় সেই বিলাসী জীবনযাপনের অংশ হয়ে ওঠে দামি গাড়ি, দ্রুতগতির যাতায়াত বা নিয়মিত ভ্রমণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই যাতায়াতের পথই কখনো কখনো নিয়ে আসে অকাল মৃত্যু।
বছরের পর বছর বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য যানবাহন সম্পর্কিত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো বিশ্বের দশ ক্রিকেটারের মর্মান্তিক গল্প।
১. অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার তারকা অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস ২০২২ সালের ১৪ মে টাউনসভিলের কাছাকাছি এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার গাড়িটি গভীর রাতে হঠাৎ রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে একাধিকবার উল্টে যায়। তিনি তখন গাড়িতে একাই ছিলেন। দুর্ঘটনার পরই স্থানীয়রা ও প্যারামেডিকরা ছুটে এলেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মাত্র ৪৬ বছরে প্রাণ হারানো এই ক্রিকেটারের মৃত্যুতে শোকের ছায়ায় ডুবে যায় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।
২. নাজিব তারাকাই (আফগানিস্তান)
আফগানিস্তানের ওপেনার নাজিব তারাকাই ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর জালালাবাদে সড়ক পার হওয়ার সময় মোটরগাড়ির ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হন। তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং তৎক্ষণাৎ নাঙ্গারহার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হলেও তিনি কোমা থেকে আর ফিরে আসতে পারেননি। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই শেষ হয়ে যায় এই প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটারের জীবন।
৩. বেন হোলিওক (ইংল্যান্ড)
২০০২ সালের ২৩ মার্চ। অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে পরিবারের এক অনুষ্ঠান শেষে নিজের গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ইংল্যান্ডের তরুণ তারকা বেন হোলিওক। হঠাৎ গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার দেয়ালে জোরে ধাক্কা লাগে। ট্র্যাজেডির সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর ১৩২ দিন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সে মারা যাওয়া ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটার তিনি।
৪. রুনাকো মর্টন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
২০১২ সালের ৪ মার্চ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে নিজের গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় রানাকো মর্টন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। গাড়িটি গিয়ে সজোরে ধাক্কা খায় একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই মিডল-অর্ডার ব্যাটার ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার মৃত্যু ক্যারিবীয় ক্রিকেটকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
৫. কলি স্মিথ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৯৫৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কলি স্মিথ। সেই সময় গাড়িতে তার সঙ্গে ছিলেন কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্স এবং টম ডিউডনি। তাদের গাড়িটি একটি ১০-টন ওজনের ক্যাটল ট্রাকের সঙ্গে সরাসরি ধাক্কা খায়। স্মিথ গুরুতর আহত হন এবং পরে তার মৃত্যু হয়। মাত্র ২৬ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি।

৬. ক্লাইড বাটস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার ক্লাইড বাটস গায়ানার ইস্ট ব্যাংক ডেমারারার কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তার গাড়ি (রেজিস্ট্রেশন PTT 66) একটি লরির ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে তিনি গুরুতর আঘাত পান এবং সেখানেই মারা যান।
৭. এজরা মোজলি (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার এজরা মোজলি ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বার্বাডোসে সাইকেল চালাতে বের হয়েছিলেন। যাত্রাপথে একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোজলি শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, কোচ হিসেবেও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের সহকারী কোচ ছিলেন তিনি।
৮. রুডি কোর্টজেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বিশ্বখ্যাত আম্পায়ার রুডি কোর্টজেন ২০২২ সালের ৯ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার রিভার্সডেল এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি কেপটাউনে গলফ খেলতে গিয়েছিলেন, ফেরার পথে তার গাড়ির সঙ্গে আরেকটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ৭৩ বছর বয়সী কোর্টজেন ছাড়াও আরও তিনজন সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। ক্রিকেটে ‘স্লো ডেথ’ আউট সংকেতের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।
৯. হ্যান্সি ক্রনিয়ে (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার বিতর্কিত কিন্তু জনপ্রিয় সাবেক অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ের মৃত্যু ঘটে ২০০২ সালের ১ জুন। তিনি একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমান—Hawker Siddeley HS 748—এ ভ্রমণ করছিলেন। বিমানটি কুয়াশায় দৃশ্যমানতা হারিয়ে আউটেনিকুয়া পর্বতমালার ক্রাডক পিকে গিয়ে আছড়ে পড়ে। তিনি ছিলেন বিমানের একমাত্র যাত্রী। পাইলটসহ সেই বিমানের সবাই মারা যান।
১০. মানজারুল ইসলাম (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ খুলনার ডুমুরিয়া এলাকায় মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন। সেই দুর্ঘটনায় তার সঙ্গে ছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার সাজ্জাদুল হাসান সেতু; তিনিও প্রাণ হারান। মোটরসাইকেলটি প্রথমে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ধাক্কা খায়, তারপর সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আঘাত লাগে। সে সময় জাতীয় দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপ মিশনে। দেশের ক্রিকেটে এটি ছিল এক শোকাবহ মুহূর্ত।
এমআই