
ক্লাসের ‘ফার্স্টবয়’ হতেই যেন ভালোবাসেন রশিদ খান
ইকবাল আজাদ
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫২
জন্ম তারিখ দেখে রশিদ খানের বয়সকে যেন বিশ্বাসই করতে পারেন না এশিয়ান ক্রিকেট প্রেমীরা। বিতর্কিত বয়স নিয়ে এখন পর্যন্ত ক্রিকেট পাড়ায় ট্রলের চাপায় ডুবেন রশিদ খান। বিতর্ক ছাড়িয়ে এই স্বল্প বয়সে রশিদ দেশের জন্য যা অর্জন করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। এমনকি নিজের অর্জনের মুকুটে নিয়মিত নতুন পালক যোগ করছেন আফগানদের স্টার বয়।
অর্জনের খাতায় রশিদ খান পিছিয়ে থাকতে চান না। মাইলফলকের চূড়ায় উঠতেই যেন ভালোবাসেন এই লেগ স্পিনার। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচে উইকেট তোলায় গতকাল (মঙ্গলবার) রেকর্ড তালিকার শীর্ষে উঠেছেন রশিদ। অর্জনের তালিকায় রশিদ খানের সেরাদের সেরা হওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। সব প্রতিযোগিতায় ক্লাসের ‘ফার্স্টবয়’ হতে যেন বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এ লেগস্পিনার।
২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন রশিদ খান। একই সফরে শুরু হয় তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পথ চলা। যুদ্ধপীড়িত এক দেশ থেকে উঠে আসা সেই রশিদ এরপর করেছেন বিশ্বজয়। আইপিএল থেকে বিপিএল, এসএ টোয়েন্টি থেকে আইএল টোয়েন্টি। বিশ্বের এমন কোনো বড় টুর্নামেন্ট নেই, যেখানে খেলেননি রশিদ খান।
বিশ ওভারের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে রশিদ খানকে নিয়ে বর্তমানে কাড়াকাড়ি চলে। আধুনিক ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করা রশিদ ইতোমধ্যে খেলেছেন ৪৬১টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এতেই মাত্র ১৮ গড়ে তুলেছেন ৬৩৩ উইকেট। ফলে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটির মালিক বর্তমানে রশিদ খান। এতদিন এই রেকর্ডটির মালিক ছিলেন ক্যারিবিয়ান পেসার ডোয়াইন ব্রাভো। রশিদ খান সেই রেকর্ড নিজের করেছেন ব্রাভোর চেয়ে ১২১ ম্যাচ কম খেলে।
ইতিহাস গড়া মাইলফলক নিয়ে রশিদ নিজে বললেন ‘অসাধারণ এক অর্জন।’ রশিদ না বললেও এটা যে অসাধারণ অর্জন, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে কীর্তি ছাড়াও রশিদের অর্জনের ঝুলিতে মাইলফলকের অভাব নেই। সেখানেও তালিকার প্রথম স্থান অর্জন করে বসেছেন আফগানদের তারকা ক্রিকেটার।
টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড এখনো টিম সাউদির দখলে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে এই সংস্করণে থেকে বিদায় নিয়েছেন কিউই ফাস্ট বোলার। তাতে বর্তমানে খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট তোলা বোলার রশিদ খান। আফগান লেগ স্পিনারের বর্তমানে উইকেট সংখ্যা ১৬১টি। সাউদিকে টপকাতে তার আর ৪টি উইকেট প্রয়োজন। তাতে পুরো বিশ ওভারের ক্রিকেটে সেরা উইকেট সংগ্রাহক বনে যাবেন এই ক্রিকেটার।
দ্রুততম ১০০ উইকেট
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সবচেয়ে দ্রুত ১০০ উইকেট তোলার রেকর্ড ছিল লাসিথ মালিঙ্গার। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ২০১৯ সালে ৭৬ ম্যাচে ১০০ উইকেট তুলেছিলেন এই খেলোয়াড়। বছরের দুয়েক পরেই মালিঙ্গার রেকর্ড তছনছ করে দেন রশিদ খান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাত্র ৫৩ ম্যাচেই ১০০ উইকেট তুলেন এই লেগ স্পিনার। শত উইকেট তোলার তালিকায় আরও ১৮ জন ক্রিকেটার যুক্ত হলেও রশিদকে টপকাতে পারেননি কেউ।
বোল্ড-লেগ বিফোরে সেরা
ব্যাটারদের জন্য রশিদ খানের সবচেয়ে কঠিন ডেলিভারি তার গুগলি। বিশেষ করে ডানহাতি ব্যাটারদের এই বলেই বেশি বোকা বানিয়েছেন তিনি। স্টাম্প করিডোরে করা এই ডেলিভারিতে ব্যাটার একটু গড়বড় করলেই আউট হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। জোরের ওপর করা গুগলিতে লেগ বিফোর কিংবা বোল্ড আউট করে উইকেট পেয়ে থাকেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে বোল্ড ও লেগ বিফোরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলার রশিদ খান। ক্যারিয়ারের ২৪ শতাংশ এলবিডব্লিউ, ৩১ শতাংশ উইকেট পেয়েছেন ব্যাটারকে বোল্ড করে।
সর্বোচ্চ ৪ উইকেট
টি-টোয়েন্টিতে একজন বোলার মাত্র ৪ ওভার বল করতে পারেন। তাতে ফাইফার পাওয়াটা বোলারদের জন্য কষ্টসাধ্যই বটে। এমনকি একজন বোলারের ৪ উইকেট পাওয়ার মাইলফলকের দেখা মিলে মাঝে-সাঝে। ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ার অর্জনেও প্রথম রশিদ খান। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ১০ বার চার উইকেট পেয়েছেন তিনি।
টানা ম্যাচ খেলার রেকর্ড
ক্লাসের ‘ফার্স্টবয়’ হতে ভালোবাসা রশিদ যেন সবখানেই প্রথম থাকতে চান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টেস্ট খেলুড়ে দলের হয়ে টানা ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছিলেন রশিদ খান। ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আফগানিস্তানের জার্সিতে টানা ৭৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন এই লেগস্পিনার। সবমিলিয়ে এ তালিকায় প্রথম থাকা খেলোয়াড় হংকংয়ের নিজাত খান। নিজের দেশের হয়ে টানা ৯৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
এমআই