ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বিশ ওভারের ক্রিকেটে অপ্রত্যাশিত ঝলক দেখাল বাংলাদেশ। অপ্রত্যাশিত বলার কারণ আছে। নিজেদের পছন্দের ফরম্যাট ওয়ানডেতে এই দলের সাথেই ধবলধোলাই হয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে প্রত্যাশার পারদ নেমেছিল তলানিতে। কারণ, কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ানদের নাম ডাক দীর্ঘদিনের। পেশির জোরে যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার খ্যাতি রয়েছে পুরান-পাওয়েলদের।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়ানো এমন ক্রিকেটারদের বিপক্ষে সিরিজ জেতার বিষয়টিও হয়তো বাস্তবিক অর্থে ভাবেনি টাইগার ভক্তরা। একে তো ওয়ানডে সিরিজের ভরাডুবি, অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই খেলা। তাতে সম্মানজনক হারই হতো ভক্তদের ভালো থাকার রসদ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশ ফিরল যেন মূর্তিমান রূপে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। শেষ ম্যাচে তো জবাব দেওয়ার ভাষাই ছিল না রভমেন পাওয়েলদের। ক্যারিবিয়ানদের আস্তানায় বসে রেকর্ড গড়া সিরিজ জয় চাট্টিখানি কথা নয়। ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে এমন ফলাফলের সাক্ষী হওয়া টাইগার ভক্তদের কাছে যেন রূপকথার গল্প। 

রূপকথা যখন ফিরেছে বাস্তবে, তখন আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেশের ক্রীড়া জগতে তাই চলছে লিটন-জাকিরদের বন্দনা। সাথে চলছে পরিসংখ্যানের ঘাঁটাঘাঁটি। জয়ের ম্যাচে কোথায়, কীভাবে রেকর্ড হলো; কোন সমীকরণে কাকে টপকে কে এগিয়ে গেল- তা নিয়ে চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ। এমনই এক সমীকরণে এখনো শীর্ষে আছেন টাইগারদের সাবেক কাপ্তান মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা।

টি-টোয়েন্টি সংস্করণের প্রথম ম্যাচ থেকেই লাল-সবুজের জার্সিতে খেলেছেন মাশরাফি। তবে ইনজুরির টানাপোড়নে ১১ বছরে কুড়ি ওভারের ম্যাচ খেলেছেন মোটে ৫৪টি। বল হাতে মানানসই পারফরম্যান্স না করার অভিযোগে ২০১৭ সালে এক প্রকার বাধ্য হয়ে এ ফরম্যাট থেকে অবসর নেন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক। কিন্তু সাত বছর আগে অবসর নেওয়া ম্যাশ ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট বিবেচনায় এখনো সবার থেকে এগিয়ে আছেন।

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ২২ জন ব্যাটার (২৫০ বল মোকাবিলা বিবেচনায়) ১০০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। এদের মধ্যে সবার ওপরে আছেন মাশরাফি। বিশ ওভারের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ৩৯ ইনিংসে ১৩ গড়ে ৩৭৭ রান করেছেন মাশরাফি। যেখানে স্ট্রাইক রেট ১৩৬.১০! এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন তরুণ ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়। ২৯ ইনিংসে ব্যাট করা এ ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট ১২৯। এরপরেই আছেন ২০১৩ সালে সবশেষ টি-টোয়েন্টি খেলা আশরাফুল।

স্ট্রাইকরেটে তালিকায় সেরা পাঁচে মাশরাফি ছাড়া নেই কোন পঞ্চপাণ্ডব সদস্য। ১২১.১৮ স্ট্রাইকরেট নিয়ে অষ্টম স্থানে আছেন সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যাওয়া সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া তামিম, মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিক যথাক্রমে ১২, ১৩, ১৫তম স্থানে রয়েছেন।

অল্প বলে বেশি রান করতে হয় বলে টি-টোয়েন্টিতে আগ্রাসী ব্যাটারদের কদর বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এ মানদণ্ডে বেশ পিছিয়ে আছেন। যার নমুনা, এখনো মাশরাফির শীর্ষস্থান দখলে রাখা। যদিও সদ্য সমাপ্ত সিরিজে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছেন শামীম পাটোয়ারী। এমনকি শেষ ম্যাচে ৪১ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে প্রতিভার জানান দিয়েছেন জাকের আলী। 

তবে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটে সেরা অবস্থানে থাকা মাশরাফিকে টপকাতে কতদিন সময় নেন, সেটাই দেখার বিষয়।

এমআই