Advertisement
Us Bangla Airlines
বক্সিং ডে টেস্ট কী, কীভাবে এমন নামকরণ?

বক্সিং ডে টেস্ট কী, কীভাবে এমন নামকরণ?

খেলা ডেস্ক

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:০৬

ক্রীড়াঙ্গনে বেশ আলোচিত নাম বক্সিং ডে। বড়দিনের পরেরদিন, অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বরকে ‘বক্সিং ডে’ বলা হয়। ক্রিকেট, ফুটবল উভয় সংস্করণে এ দিনকে আলাদা গুরুত্বের চোখে দেখে ক্রীড়াবিদ এবং ভক্ত-অনুরাগীরা। তাতে বক্সিং ডে ঘিরে সাজানো হয় মহাকাব্যিক ম্যাচের সূচি। বড়দিনের ছুটিতে এসব ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে বাড়ে দর্শকদের আনাগোনা। প্রিয় দলের সমর্থনে গ্যালারিতে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। 

ক্রিকেটে বক্সিং ডে প্রথা চালু করেছে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যে দিয়ে এ প্রথা চালু হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বক্সিং ডে প্রথা চালু হয় ১৯৫০-৫১ মৌসুমে। অ্যাশেজের মাধ্যমে এ প্রথা ভিড় করে ক্রিকেট পাড়ায়। তবে প্রথম ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে সেবার খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ফুটবলে বক্সিং ডে শুরু হয় ক্রিকেটেরও আগে। ১৮৬০ সালে ইংল্যান্ডের দুটি প্রাচীনতম ক্লাব শেফিল্ড এফসি ও হলাম এফসির ম্যাচ দিয়ে দিবসভিত্তিক এ ম্যাচ চালু হয়। ১৮৮৬ সালে প্রথমবার ইংলিশ লিগের ম্যাচ রাখা হয় ২৬ ডিসেম্বর। বক্সিং ডেতে এখনও নিয়মিত বড় দলের ম্যাচ রাখে ইপিএল কর্তৃপক্ষ। তাতে প্রশ্ন উঠতেই পারে, বক্সিং ডে কী? কীভাবে এমন নামকরণ? কিংবা ক্রিকেটে ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ প্রথা চালু কীভাবে?

বক্সিং ডে টেস্ট কী, কীভাবে নামকরণ?

খ্রিস্টান ধর্মের মহোৎসব বড়দিন। প্রতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর এ দিবস পালন করা হয়। বড়দিনের পরেরদিন, অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর মাঠে যে ম্যাচ গড়ায়- সেটাই বক্সিং ডে ম্যাচ হিসেবে পরিচিত। ক্রিকেটে সাধারণত এ দিনে টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ২৬ ডিসেম্বর সাদা পোশাকে শুরু হওয়া ম্যাচকে ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। তবে বক্সিং ডে শব্দযুগলের উৎপত্তি নিয়ে একাধিক মতবাদ রয়েছে।

উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে শ্রমিকরা বড়দিনে বিভিন্ন উপহার পেতেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বক্সে করে দেয়া হতো এসব উপহার। কিন্তু বড়দিনের ব্যস্ততায় এসব বক্স খোলা হতো পরেরদিন, অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর। তবে বক্সে করে দেওয়া এ উপহারের কারণে এর নামকরণ হয় বক্সিং ডে। 

আরেকটি মত হলো, ধনাঢ্য খ্রিস্টানরা সুবিধাবঞ্চিতদের বক্সে করে বড়দিনের পরদিন উপহার দিতেন। সেই শতাব্দী থেকেই ২৬ ডিসেম্বর দিনটিকে বক্সিং ডে হিসেবে উদযাপন করা শুরু করেন বৃটিশ রানী ভিক্টোরিয়া। এরপর থেকে বৃটেন, অস্ট্রলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ কমনওয়েলথের বেশ কয়েকটি দেশেই পালিত হয় বক্সিং ডে।

বক্সিং ডে এবং টেস্ট ম্যাচ

বক্সিং ডেতে টেস্ট ম্যাচের প্রচলন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৫০ থেকে শুরু হওয়া এ প্রচলন এখনো ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বক্সি ডে চালু হয় ১৯৬৮ সালে। তবে আধুনিক ক্রিকেটে বক্সি ডের উত্থান ঘটে ১৯৭৪-৭৫ অ্যাশেজ সিরিজে। বক্সিং ডেতে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন নিয়ে ১৯৮০ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড। এরপর থেকে প্রতি বছরের ২৬ ডিসেম্বর এমসিজিতে বিভিন্ন প্রতিপক্ষের সাথে টানা টেস্ট ম্যাচ খেলছে অজিরা। শুধু ১৯৮৯ সালে বক্সিং ডেতে টেস্ট ম্যাচের পরিবর্তে ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, বক্সিং ডে উপলক্ষে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কিউইদের মাটিতে নিয়ম করে ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট হয়েছে। তারপর থেকে অবশ্য এ ধারায় ছেদ পড়েছে। 

অস্ট্রেলিয়ার কাছে যেখানে পিছিয়ে ভারত

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট খেলেছিল ১৯১৩ সালে। তারপর দীর্ঘবিরতির পর ১৯৯২ সালে পোর্ট এলিজাবেথে আবার ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ ম্যাচ চালু হয়। এর মাঝে কয়েক আসর বিশেষ এ দিনের ভেন্যু নিয়ে জটিলতায় পড়ে প্রোটিয়ারা। তবে ২০১৮ সাল থেকে সেঞ্চুরিয়ানের সুপার স্পোর্ট পার্কেই ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ আয়োজন করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

চলতি বছরে অস্ট্রেলিয়া-ভারত ছাড়াও বক্সিং ডেতে আরও দুটো টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সেঞ্চুরিয়ানে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলতে নামবে পাকিস্তান। এ সিরিজে নির্ধারণ হবে চ্যাম্পিয়নস লিগে দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল খেলার পথ। এছাড়া একই দিনে জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে দুই টেস্টের সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে আফগানিস্তান। 

১৯৯৬ সালে ঘরের মাঠে সবশেষ ঐতিহ্যবাহী বক্সিং ডে টেস্ট খেলতে নেমেছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর ২০০০ ও ২০১৭ সালে বিদেশের মাটিতে বক্সিং ডে টেস্টে মাঠে নেমেছিল তারা। তবে প্রথমবারের মতো বক্সিং ডে টেস্ট খেলবে আফগানিস্তান

বক্সিং ডে টেস্টের ৫ স্মরণীয় ঘটনা

১৯৮৫ সালের অ্যাশেজে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টেই অভিষেক হয়েছিল অজি কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহের। ১৯৮৮ সালের এ দিনে ম্যালকম মার্শাল ৩০০ টেস্ট উইকেট নিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে বক্সিং ডে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন বিখ্যাত লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ১৯৯৫ সালে এই টেস্টেই অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার শ্রীলঙ্কার স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনকে অবৈধ অ্যাকশনে বল ছোঁড়ার অভিযোগে বার বার ‘নো বল’ ডাকেন। সেই নিয়ে তোলপাড় হয় ক্রিকেটবিশ্ব। ২০০৬ সালে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টেই ৭০০ টেস্ট উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন শেন ওয়ার্ন। 

এমআই