
মুশফিকের অবসর: সতীর্থরা কে কী বললেন
খেলা ডেস্ক
০৬ মার্চ ২০২৫, ১৫:০৬
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জার্সিতে প্রায় দুই দশক প্রতিনিধিত্ব করছেন মুশফিকুর রহিম। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে অর্জনের মাত্রায় শত গল্পের জন্ম দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। ওয়ানডে ক্রিকেট মুশফিক যে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার, তা আর আলাদা করে বলার কিছু নেই। র্যাঙ্কিং, গড়, ম্যাচের জেতানোর সামর্থ্য, দলকে টেনে তোলা মুশফিক কালের খেয়া পেয়েছিলেন দেশ সেরা ব্যাটারের তকমা।
ক্যারিয়ার লম্বা হওয়ার সঙ্গে বয়সটাও বেড়েছে। সময় এসেছে তরুণদের সুযোগ করে দেওয়ার। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর সেই সুযোগটাই করে দিলেন সতীর্থদের। গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ করেছেন মুশফিকুর রহিম। এরপর থেকেই সাবেক এবং বর্তমান সতীর্থদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
মুশফিকের অবসর ঘোষণার পর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন, আজ এমন একজন ব্যক্তি অবসর নিল যার সঙ্গে আমার অলমোস্ট ২০ বছর বা ২৫ বছর একটা জার্নি। একটা স্ট্যাটাসে আসলে আমি মানুষকে বোঝাতে পারব না যে আমার ফিলিংসটা তার প্রতি।
তামিম বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন যে কিছুক্ষণ আগে মুশফিক ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছে। মুশফিককে আমি এতটুকুই বলছি যে তোর সাথে আমার খেলা শুরু অনূর্ধ্ব ১৫ থেকে। কেমনে একটা ছেলে এতটা কষ্ট করতে পারে। একটা মানুষের পক্ষে যতটা কষ্ট করা সম্ভব আমার মনে হয় সে সবটুকুই করেছে।’
মুশফিকের অবসরে আবেঘঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘তোমার বিদায়ের ঘোষণায় এক লহমায় অনেক কিছু ভেসে উঠল চোখে। এত বছরের একসঙ্গে পথচলা, মাঠের ভেতরে-বাইরে কতশত স্মৃতি! ওয়ানডেতে তোমার রেকর্ডই তোমার হয়ে সাক্ষ্য দেবে অনেক কিছুর। তোমার ব্যাটের দ্যুতিতে কত আলোর দিন এসেছে দেশের ক্রিকেটে!’
‘তবে রেকর্ড বইয়ে লেখা থাকবে না, কতটা নিবেদন আর নিষ্ঠায় তুমি ক্যারিয়ার গড়েছিলে, কতটা ঘামের স্রোত পেরিয়ে সাফল্যের তীর ছুঁয়েছিলে। তোমার পরিশ্রম, প্রতিজ্ঞা আর ত্যাগের গল্প বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রজন্মের পর প্রজন্মে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে’- যোগ করেন মাশরাফি।
মুশফিকের অবসর প্রসঙ্গে তামিম তাসকিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একটি অধ্যায় শেষ হলো! মুশি ভাই, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট কল্পনা করা কঠিন। আপনার প্যাশন, ডেডিকেশন, ফাইটিং স্পিরিট সবকিছুই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। আপনার সাথে মাঠ শেয়ার করতে পারা এবং শিখতে পারা আমার জন্য দারুণ সম্মানের ব্যাপার ছিল। পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য আপনাকে শুভকামনা – আপনার লিগ্যাসি সবসময় থাকবে।’
মুশফিকের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে শরিফুল লিখেছেন, ‘আমার কাছে আপনি সব সময়ই সেরা। ধন্যবাদ বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এতো সুন্দর সময় উপহার দেওয়ার জন্য। আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা।’
মুশফিকের মতোই বগুড়া থেকে বেড়ে উঠেছেন তাওহীদ হৃদয়। মুশফিককে আইডল উল্লেখ করে এই ব্যাটার লিখেছেন, ‘বগুড়া স্টেডিয়ামে আপনি (মুশফিক) প্র্যাকটিস করছেন শুনে ছোটবেলায় আপনাকে দেখার আশায় স্টেডিয়ামের গেইটের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে শুরু করে, ওডিআই - এর আন্তর্জাতিক ক্যাপ আপনার হাত থেকে গ্রহণ করা এবং একই ড্রেসিং রুম শেয়ার করা:- আমার কাছে রূপকথার গল্পের থেকে কম নয়‼ যদিও আমি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি, তবুও আপনাকে অবসরের জন্য শুভকামনার বার্তা, আইডল মুশফিকুর রহিম। যেকোনো কিছুর চেয়ে এবং যে কারও চেয়ে বেশি মিস করব আপনাকে।’
মুশফিকের সঙ্গে ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় পার করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি নিজেও আছেন বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। সেই মাহমুদউল্লাহও স্মৃতিচারণ করেছেন মুশফিককে নিয়ে, ‘প্রিয় মুশফিক, দুর্দান্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারের জন্য তোমাকে অভিনন্দন। দুবাইয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে পাঁজর ভাঙা সেঞ্চুরিটা আমার এখনও মনে আছে। এটা খেলার প্রতি তোমার শ্রদ্ধা, উৎসর্গ এবং সর্বোচ্চ স্তরে পারফর্ম করার জন্য কঠোর পরিশ্রমী মানসিকতা প্রদর্শন করে। তোমার এই ইনিংসটি যেকোনো ক্রিকেটারকে অনুপ্রাণিত করবে। নিঃসন্দেহে তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের রত্ন। লাল বলের যাত্রার জন্য তোমাকে শুভকামনা।’
মুশফিকের অনুপ্রেরণা তরুণ রিশাদের কাছে পাওয়ার হিলিং-এর মতো। ফেসবুকে মুশফিকের অবসর নিয়ে রিশাদ লিখেন, ‘মাঠে খেলতে স্কিলের পাশাপাশি অনুপ্রেরণা খেলাকে ব্যপকভাবে প্রভাবিত করে। আপনি স্ট্যাম্পের পেছনে অথবা অফ স্ট্রাইকে থেকে যেভাবে মোটিভেট করেছেন, সাহস দিয়েছেন, গাইড করেছেন, সেটা ইমার্জিং প্লেয়ারদের কাছে পাওয়ার হিলিং এর মতো। আপনার ক্যারিয়ারের ১৯ বছরে অনেক অল্প সময় আপনার সাথে টিম শেয়ার করার সৌভাগ্য হয়েছিলো। তবে আপনার থেকে যা শিখেছি সেটা অবশ্যই আমাদের পরবর্তী জুনিয়রদের সাথে গল্প করবো।’
মুশফিকের অবসরে স্মৃতিচারণ আর আক্ষেপের গল্প শুনিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ তাইজুল ইসলাম। ফেসবুকে এই বাঁহাতি স্পিনার লিখেন, ‘আপনার অধিনায়কত্বেই আমার রঙিন পোশাকে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ,যদিও যাত্রাটা খুব একটা লম্বা হয়নি। তারপরও কিছু অর্জনের মূহুর্ত আছে একসাথে যা সারাজীবন স্মরণ থাকবে।বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আপনি অনেক কিছু দিয়েছেন। রঙিন পোশাকে আপনাকে আর দেখা হবেনা এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। তারপরও সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। অবশ্যই মহান আল্লাহ তাআলা উত্তম পরিকল্পনাকারী।’
এমআই